Rojgar Mela 2025: সম্প্রতি এক রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় রোজকার মেলা।কিন্তু দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সাধারণত, এমন ইভেন্টে বহু বেকার যুবক-যুবতী কাজের সন্ধানে আসেন এবং তাদের সামনে কোনও অফার আসা মাত্রই তা গ্রহণ করে নেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। ১০,০০০ থেকে ২১,০০০ টাকা মাসিক বেতনের চাকরির অফার পেয়েও বহু আবেদনকারী তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

Rojgar Mela 2025

এই চাকরি প্রত্যাখ্যানের পেছনে ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তার চিন্তা করে। মেলার আয়োজকদের মতে, উপস্থিত বেশিরভাগ কোম্পানি গুজরাট ও আরও কিছু দূরবর্তী রাজ্যে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে চাকরিপ্রার্থীরা সেই অফারে আগ্রহ দেখাননি। তাঁদের যুক্তি ছিল, এত কম বেতনে হাজার কিলোমিটার দূরে গিয়ে থাকা-খাওয়া চালিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। বাড়ি থেকে এতটা দূরে গিয়ে শুধুমাত্র ১৫-১৭ হাজার টাকায় টিকে থাকা কার্যত অসম্ভব।

উত্তর প্রদেশের এই চাকরি মেলার এমন ছবি প্রমাণ করে দেশের যুব সমাজ এখন আর অন্ধভাবে কোনও চাকরি গ্রহণ করছে না। বরং তারা এখন চাকরি বেছে নিচ্ছে বিবেচনা করে— কাজের স্থান, বেতন, ভবিষ্যত সুরক্ষা ও জীবনযাত্রার মান। বিশেষ করে যাঁরা বিগত কয়েক বছর ধরে কর্মহীন, তাঁদের কাছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে শুধুমাত্র “চাকরি পাওয়া মানেই সাফল্য”— এই পুরনো ধারণা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়।

এখান থেকে একজন প্রার্থী বিজয় পাল, যিনি বদায়ুঁ থেকে এসেছেন, জানান যে তাঁকে একটি কোম্পানি ১৫ হাজার টাকার চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু তাতে তিনি সম্মতি দেননি। তাঁর বক্তব্য, এই বেতনে জীবিকা নির্বাহ অসম্ভব, বিশেষ করে যদি কাজ করতে হয় অন্য রাজ্যে গিয়ে। অন্যদিকে, লখনউয়ের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে আসা একজন প্রার্থী তেজ নারায়ণ শর্মা বলেন, তাঁকে ১৭ হাজার টাকার অফার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন।

এই রোজগার মেলায় অংশ নেওয়া বেশ কিছু প্রার্থী বলেন, যদি একই চাকরি তাঁদের নিজ রাজ্যে বা নিকটবর্তী এলাকায় হতো, তাহলে তাঁরা অফার গ্রহণ করতেন। অনেকের মতে, বহির্বিশ্বের চাকরি অফার করার আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর উচিত স্থানীয় জীবনযাত্রার খরচ, ভাড়াবাড়ি, খাবার, যাতায়াতের খরচ ইত্যাদি বিবেচনা করে স্যালারি নির্ধারণ করা। না হলে এমন চাকরি প্রস্তাব ‘নামের জন্য চাকরি’ হয়ে দাঁড়ায়, বাস্তবে লাভ হয় না।

তবে এই রোজগার মেলার মাধ্যমে আরও একটি ইতিবাচক দিক উঠে এসেছে—দেশের যুবসমাজ এখন নিজের মেধার মূল্য দিতে শিখেছে। তারা বুঝতে পারছে যে চাকরি মানে শুধুমাত্র একটা পে-স্লিপ নয়, বরং সেটি তার ভবিষ্যতের ভিত্তি। ফলে কম বেতনে, অপরিচিত স্থানে গিয়ে মানসিক চাপ ও জীবনযাত্রার মানের অবনতি স্বীকার না করেও তাঁরা সাহসের সঙ্গে “না” বলছেন।

অন্যদিকে , চাকরি মেলায় অংশ নেওয়া সংস্থাগুলোর একাংশ জানিয়েছে, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা, কিন্তু অধিকাংশ প্রার্থী যখন অফার গ্রহণ করলেন না, তখন তাঁরাও নিজেদের বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন অনুভব করছেন। অনেক কোম্পানি এর পর থেকে রাজ্যভিত্তিক নিয়োগ এবং লোকাল ক্যাম্পাস হায়ারিংয়ের পরিকল্পনা করছেন।

এদিকে এই পুরো ঘটনায় একটা স্পষ্ট বার্তা মিলেছে— ভারতীয় যুব সমাজ এখন আর যেকোনো চাকরি নিয়ে খুশি নয়। তারা মূল্য চাইছে নিজেদের পরিশ্রমের, দক্ষতার এবং জীবনযাত্রার মানের। এটা দেশের জন্য একটি শুভ ইঙ্গিত, কারণ এটি শ্রমবাজারে একটি গঠনমূলক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।

উত্তর প্রদেশের লখনউ-র মেলার পরপরই প্রয়াগরাজে আরেকটি বিশেষ রোজগার মেলার আয়োজনের ঘোষণা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন নিগম (UPSRTC) সেখানে চুক্তিভিত্তিক চালক নিয়োগ করবে। এই মেলা ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে এবং আবেদনকারীদের ন্যূনতম যোগ্যতা হতে হবে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ। সঙ্গে থাকতে হবে ভারি গাড়ি চালানোর বৈধ লাইসেন্স, যার বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে।

এদিন চাকরিপ্রার্থীদের ডকুমেন্টসহ নির্ধারিত স্থানে সময়মতো পৌঁছাতে বলা হয়েছে। এই নিয়োগ শুধুমাত্র প্রয়াগরাজ অঞ্চলের জন্য এবং এতে স্থানীয়দের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পরিবহন বিভাগ।

আর এই ঘটনা থেকে একটি ব্যাপার পরিষ্কার— ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে শুধু কোম্পানির পক্ষ থেকে অফার দিলেই চলবে না, তা যোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য হতে হবে। কর্মীর কাজের মান, তার জীবনযাত্রার খরচ, মানসিক শান্তি, কর্মস্থলের দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় না রাখলে, চাকরি অফার দিলেও গ্রহণযোগ্যতা আসবে না।

যদিও এখন সময় এসেছে, কোম্পানিগুলোকেও তাদের মনোভাব বদলানোর। যোগ্য চাকরি মানে শুধু বেতন দেওয়া নয়, একটি সম্মানজনক কর্ম-জীবন গড়ার সুযোগ করে দেওয়া। যুবসমাজের এই নতুন মানসিকতা চাকরির বাজারে এক ইতিবাচক ও প্রগতিশীল পরিবর্তন আনবে—এই আশাই এখন সকলের।

By Mr Jobre

I writing content for several years. I write content related to job,scheme,business and educational related update. Please forgive me for any typing mistake or others.