ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’! পশ্চিমবঙ্গে এর প্রভাব কেমন জেনেনিন – Cyclone Shakti Update

Cyclone Shakti  Update:আবারও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলা একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসের শেষ ভাগে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলেছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ (Cyclone Shakti)। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে, বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, ও বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল এবং আবহাওয়া গবেষক পলাশ জানিয়েছেন, মে মাসের ১৬-১৮ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যা ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ২৩ থেকে ২৮ মে-র মধ্যে ওড়িশা থেকে চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ ‘শক্তি’ করার প্রস্তাব দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

Cyclone Shakti Update

ঘূর্ণিঝড় শক্তি: কবে, কোথায়, কীভাবে আঘাত হানবে?

আবহাওয়ার আপডেট অনুযায়ী:

  • ১৬-১৮ মে: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা
  • ২০ মে: নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে
  • ২৩-২৬ মে: ঘূর্ণিঝড় শক্তি ওড়িশা থেকে বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে

আবহাওয়াবিদ পলাশের মতে, “ঘূর্ণিঝড় শক্তির সম্ভাব্য গতিপথের মধ্যে রয়েছে ওড়িশা উপকূল, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চল, এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চল। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বাংলার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে এবং বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে।”

কেন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে?

ঘূর্ণিঝড় শক্তিকে ঘিরে আশঙ্কার অন্যতম কারণ হল এর সম্ভাব্য গতি ও শক্তি। আবহাওয়ার তথ্য বলছে, এটি একটি ‘Severe Cyclonic Storm’ (SCS) বা তার থেকেও বেশি শক্তিশালী হতে পারে। সেই অনুযায়ী, এটি ঘন্টায় ৯০-১২০ কিমি বেগে বাতাস বইয়ে আনতে পারে। এমন শক্তি নিয়ে এটি যদি উপকূলে আছড়ে পড়ে, তবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষ করে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, সুন্দরবন এলাকার নদী উপকূল ও চাষের জমিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকছে। পাশাপাশি, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসও দেখা দিতে পারে, যার কারণে বহু মানুষের ঘরবাড়ি, চাষের জমি, ও জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে উঠতে পারে।

কোন কোন জেলায় বেশি প্রভাব পড়তে পারে?

প্রাথমিক ভাবে যে জেলাগুলিতে শক্তির প্রভাব পড়তে পারে:

  • পশ্চিমবঙ্গ: দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা
  • বাংলাদেশ :খুলনা, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী
  • ওড়িশা: পুরী, গঞ্জাম, ভদ্রক, জগৎসিংহপুর

এই সমস্ত এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, দমকা হাওয়া ও বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ইতিমধ্যেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে উদ্ধার কার্য চালানো যায়।

কি বলছে হাওয়া অফিস?

বাংলাদেশের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৬ মে থেকে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই নিম্নচাপ ধীরে ধীরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ২৩ মে-র দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর নাম হবে ‘শক্তি’। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, এটি একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে চলেছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের IMD (India Meteorological Department) এখনও পর্যন্ত সতর্কতা না জারি করলেও, স্যাটেলাইট ছবিতে পরিষ্কারভাবে নিম্নচাপের সম্ভাব্য গঠন চোখে পড়ছে।

সাধারণ মানুষকে কী করতে হবে?

ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা পেলেই কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে।
  • স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা জরুরি।
  • প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, ওষুধ, ব্যাটারি, চার্জার, টর্চ ইত্যাদি আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা উচিত।
  • চাষিদের তাদের ফসল আগেই ঘরে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • মৎস্যজীবীদের ২০ মে থেকে সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।

সরকারি প্রস্তুতি কতটা?

এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় শক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বুলেটিন দেওয়া হয়নি। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, NDRF ও SDRF দলগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথের ওপর নজর রাখা হচ্ছে, এবং যেকোনো মুহূর্তে বিপদ সংকেত দেওয়া হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী ব্লকগুলিতে প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করেছে।

আবহাওয়াবিদদের পরামর্শ

আবহাওয়াবিদরা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যেহেতু এখনো ঘূর্ণিঝড়ের গঠন সম্পূর্ণ হয়নি, তাই তার গতি ও শক্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে আগাম প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

তারা বলছেন, ১৬ মে থেকে আবহাওয়ার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে এই ঝড় কবে ও কোথায় আছড়ে পড়বে। তাই প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার আপডেট দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় শক্তি এখনও পর্যন্ত সম্ভাব্য হলেও তার আশঙ্কা যথেষ্ট গুরুতর। বঙ্গোপসাগরে এরকম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তা পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং বাংলাদেশে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এখনই সময় সতর্ক হওয়ার।

সরকার ও প্রশাসনের উচিত জনগণকে আগে থেকেই সচেতন করা এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একমাত্র সকলে একসঙ্গে কাজ করলেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব।

আপনার এলাকায় যদি শক্তির সম্ভাব্য প্রভাব পড়ে, তাহলে সরকারি নির্দেশ মেনে চলুন ও নিরাপদ থাকুন। নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।