Business Idea : বর্তমানের মূল্য বৃদ্ধির বাজারে মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার ইনকাম করা খুবই সামান্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।কেননা অনেক মানুষ রয়েছে যার দৈনিক ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচে হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে চাকরি হোক কিংবা অন্য কোন ইনকাম সোর্স সংসার চালানো প্রায় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে মানুষ স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে তার পরিবারকে চালাতে গেলে কমপক্ষে মাসে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা দরকার। আপনি কোন আগের ব্যবসায়ী হন কিংবা চাকরিজীবী এবার আপনার জন্য এমন এক ইনকাম কোর্স নিয়ে আসা হয়েছে যেখানে বাস্তবে একজন মাসিক আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করেছে।

Business idea

আপনি যদি একজন নতুন ব্যবসার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন কিংবা কোন চাকরি করে থাকেন তার পাশাপাশি নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এই প্রতিবেদন আপনারই জন্য। আজকে আমরা এমন একটি ব্যবসার আইডিয়া দিতে যাচ্ছি যেখানে সামান্য পরিমাণ জমি থাকলেই এটি শুরু করতে পারবেন এবং এর জন্য যেতে হবে না কোথাও। বাড়িতে থেকে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং মাসিক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। আজকে যে ব্যবসা সম্পর্কে পড়তে যাচ্ছি সেটি হল টমেটো চাষ।

বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে টমেটো এমন একটি সবজি যার চাহিদা সারা বছর জুড়েই থাকে। রান্নাঘরের প্রতিটি পদে টমেটোর ব্যবহার অপরিহার্য যা সকলের জানা আছে। এর ফলে বাজারে এর কখনও চাহিদা কমে না বরং অসময়ে এর চাহিদা আরো বেড়ে যায়। আর বর্ষাকালে যখন অন্যান্য অনেক সবজির দাম ওঠানামা করে, তখন টমেটোর দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে থাকে। ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন অনেক তরুণ কৃষক ব্যবসীরা। শুধু নিজেদের জমিতে নয়, অনেকে লিজ নেওয়া জমিতেও টমেটো চাষ করে মাসে লাখ টাকার উপার্জন করছেন।

ভারতের লখনউয়ের এক তরুণ কৃষক শুভম মিশ্র এর বাস্তব উদাহরণ। তিনি মাত্র ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বর্ষার মরসুমে টমেটো চাষ করা শুরু করেন। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই অল্প বিনিয়োগেই তিনি প্রতি মৌসুমে ২ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তার। এতে যেমন সময়ের সাশ্রয় হয়, তেমনি শ্রমও তুলনামূলকভাবে খুব কম লাগে। এটি শুধু একটি ব্যবসায়িক মডেল নয়, বরং গ্রামের যুব সমাজের জন্য একটি কার্যকরী এবং অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোগও হতে চলেছে।

টমেটো চাষের পদ্ধতি সহজ হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করতে হয় এতে। সর্ব প্রথমেই একটি উপযুক্ত জমি বাছাই করতে হয়, যা বর্ষাকালের জলের প্রবাহ সহজেই সহ্য করতে পারে। এরপর প্রয়োজন হয় ভাল মানের টমেটোর বীজ সংগ্রহ করা। বীজ থেকে নার্সারি তৈরি করার পর, সেই চারা ২০-২৫ দিন বয়স হলে জমিতে রোপণ করতে হবে। জমি ভালোভাবে ২-৩ বার চাষ করে সেখানে কেয়ারি বা মাচা তৈরি করা দরকার, যাতে গাছগুলি সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে সহজেই।

রোপণের পরে গাছগুলিকে সোজা রাখতে ও ঝড়ে বা ভারসাম্যহীনতায় না পড়তে গাছের পাশে খুঁটি বা বাঁশ দিয়ে সাপোর্ট দিতে হবে। এই কাজটি অনেক সময় উপেক্ষা করা হয়, যার ফলে ফসল ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে প্রচুর। এর পাশাপাশি নিয়মিত সেচ দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার রাখা, পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশকের ছিটানো—এসব বিষয়গুলোও অত্যন্ত জরুরি বিষয়।

চাষ শুরুর ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে প্রথম ফলন পাওয়া শুরু হয়ে যায়। গাছের যত্ন ঠিকঠাক থাকলে একেকটি গাছ থেকে প্রচুর টমেটো পাওয়া সম্ভব। আর সঠিক সময়ে বাজারে বিক্রি করতে পারলে দামও পাওয়া যায় বেশ ভালো। অনেক সময় ১ কেজি টমেটোর দাম ৫০ টাকা বা তারও বেশি উঠে দাড়াই, বিশেষ করে যখন বাজারে চাহিদা বাড়ে এবং জোগান কম থাকে।

এট একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। শুভম মিশ্র মাত্র ২-৩ বিঘা জমিতে চাষ করে এই সাফল্য পেয়েছেন আপনি নিজের সামর্থ অনুযায়ী শুরু করতে পারেন। ছোট জমিতে হলেও পরিকল্পিতভাবে চাষ করলে আয় অনেক বেশি করতে পারবেন। অনেকেই এখন পারমাকালচার বা অর্গানিক পদ্ধতিতেও এই চাষ করছেন, যাতে বাজারে প্রিমিয়াম দামে ফসল বিক্রি করা যাচ্ছে ।

এছাড়াও এই ব্যবসার আরও একটি সুবিধা হলো—এটি মৌসুমি ব্যবসা হলেও দ্রুত ফল দেয় এবং পুনরায় শুরু করাও সহজ। একই জমিতে একবার ফলন শেষ হলে একটু বিশ্রাম দিয়ে আবার নতুন করে মৌসুমে চাষ শুরু করা যায়। এটি একদিকে যেমন চাষিকে ব্যস্ত রাখে, তেমনি বছরে একাধিকবার আয়ের সুযোগও করে দেয়।

বর্তমানে রাজ্য বা কেন্দ্র সরকার থেকেও বিভিন্ন কৃষি স্কিম, অনুদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যা টমেটো চাষীদের অনেক সহযোগিতা করছে। এদিকে স্থানীয় কৃষি অফিস, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র কিংবা কৃষি ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে অনেকে এই চাষ পদ্ধতি শিখা শুরু করেছেন। তাছাড়া অনেক রাজ্যে কৃষি ঋণ পাওয়া যায় মাত্র ৪%-৫% সুদে, যা এই ব্যবসা শুরু করতে আরও বেশি সাহায্য করে।

এই উদ্যোগ কেবল আয় বৃদ্ধিই নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশেও বড় ভূমিকা পালন করে। টমেটো চাষ করে শুধু একজন কৃষক নয়, তার সঙ্গে যুক্ত হয় ৫-১০ জন শ্রমিক, বীজ ও সার বিক্রেতা, পরিবহণ সংস্থা, পাইকার ও খুচরো বিক্রেতারাও লাভবান হয়। অর্থাৎ, একটি ছোট উদ্যোগ থেকে তৈরি হয় একটি ছোট অর্থনৈতিক চক্রও বলা যায়।

যারা চাকরি পাচ্ছেন না বা ব্যবসা শুরু করার মতো বড় পুঁজি যাদের নেই—তাদের জন্য এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত হতে চলেছে। কম খরচ, অল্প সময় ও দ্রুত ফলনের এই সুযোগে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে যারা শহরে চাকরি করে অস্থিরতা ও চাপে রয়েছেন, তাদের মধ্যেও অনেকেই গ্রামের দিকে ফিরছেন এবং এমন কৃষি ব্যবসা শুরু করে নতুন করে জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছেন তারাও।

সর্বোপরি এটাই বলা যায় আপনি শহরে হন কিংবা গ্রামের বাসিন্দা যদি এই উদ্যোগ নিয়ে আপনি নিজের ব্যবসা দাঁড় করতে পারেন তাহলে নিঃসন্দেহে মাসে চমৎকার ভাই করতে পারেন। এর পাশাপাশি আপনি একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে বিভিন্ন সিজনে তাছাড়া দামে বিক্রি করে ভালো মুনাফা পড়তে পারেন। যদি আপনি একজন শিক্ষিত হয়ে থাকেন এবং এই জিনিসগুলি ভালোভাবে করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য আরও সহজ হবে এবং আয়ের জন্য নয়া পথ খুলে যাবে।

By Team JR

Team JR write content for several years. We have well experience in content writing such as job and scheme or other educational and career update. Thank you